India Tour



ভারতীয় ভিসা, ভ্রমন A টু Z
আমরা বাংলাদেশীরা যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য অভারসিস ইউনিভার্সিটিকে সিলেক্ট করি, তখন দেখা যায় পছন্দের ইউনিভার্সিটির এম্বাসি আমাদের দেশে নেই। তাই বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেতে হয়। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সাথে ভারতীয়-> ভিসা, ভ্রমন, খরচপাতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত আলোচনাঃ
আপনাকে ভারতীয় ভিসার জন্য এই http://www.ivacbd.com/ ওয়েবসাইট এপ্পলাই করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা/ Entry ভিসার জন্য Apply করতে হবে। এপয়েন্টমেন্ট তারিখ এবং সময় ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফরমে উল্লেখ থাকবে। বর্তমানে ভারতীয় ভিসার জন্য জন্য কোন ধরনের Appoinment or E-Token দরকার হয় না। সুতরাং অযথাই দালাল ধরে টাকা নষ্ট করবেন না।
ভারতীয় ভিসার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবেঃ
1. অরিজিনাল পাসপোর্ট।
2. সম্প্রতি তোলা ১ কপি ছবি(ছবির সাইজ ২”*২” ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা)।
3. ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি যাদের নেই তারা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি দিবেন।
4. চলতি মাসের অরিজিনাল ইলেক্ট্রিসিটি বিল/গ্যাস বিল/টেলিফোন বিল/পানির বিল যেকোনো একটি লাগবে।
5. আপনার কলেজ/ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ডের ফটোকপি। যারা চাকুরী করছেন তাঁরা তাদের ভিসিটিং কার্ড এবং জব আইডি কার্ডের ফটোকপি দিবেন।
6. সম্প্রতি ০৩ মাসের ব্যাংক স্টেইটমেন্ট যেখানে ১৫০$ সমপরিমাণ টাকা থাকতে হবে। অথবা যেকোনো ব্যাংক থেকে ১৫০$ এন্ডোরস বা ডলার ক্রয়ের প্রমানপত্র।(আমার মতে ১ম অপশনটাই সহজ)
7. অনলাইন অ্যাপ্লিকেশান ফরম।
8. ভিসা ফি ৪০০ টাকা নগদ দিতে হবে।
অতিরিক্ত ডকুমেন্ট সমূহ (নট মেন্ডাটরি কিন্তু দিলে ভাল):
১. সর্বশেষ স্টাডি ডিগ্রির সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
ভারতে বাই রডে কিভাবে যাবেন এবং কত খরছ হবেঃ
বাংলাদেশ থেকে শ্যামলী, গ্রীনলাইন, সোহাগ এই পরিবহণ গুলি ঢাকা মতিঝিল থেকে যশোর বেনাপলের উদ্দেশে প্রত্যেক দিন সকালে ছাড়ে। যশোর বেনাপল থেকে ওরাই আপনাকে তাদের ভারতীয় বাসে নিয়ে যাবে যেটা সরাসরি কলকাতা যাবে। উল্লেখিত তিনটি পরিবহনের কোয়ালিটি একি রকম। ঢাকা টু কলকাতা যেতে সময় লাগে প্রায় ১৩ ঘণ্টা।
নোটঃ আপনার সাথে তেমন হেভি ব্যাগ নেয়ার প্রয়োজন নেই। একটি কাঁধ ব্যাগে অবশ্যই ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য সকল ডকুমেন্ট সহ ফর্মাল প্যান্ট, সার্ট, টাই এবং ফর্মাল সু নিতে ভুলবেন না।
প্রথম, আপনাকে অগ্রিম টিকেট কেটে রাখতে হবে (শুধু মাত্র যাবার)। টিকেটের মূল্য ঢাকা টু কলকাতা টোটাল ১৬০০-১৭০০ টাকা।
দ্বিতীয়, সোনালি ব্যাংক থেকে ২০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স ফীর রশিদ নিতে হবে।(ট্রাভেল ট্যাক্স বাংলাদেশ ইমিগ্রেসানে এন্ট্রির সময়ও দেওয়া যায় কিন্তু সেখানে বিশাল লম্বা লাইন আপনাকে ধরতে হবে)।
তৃতীয়, বাংলাদেশ বর্ডারে বাস অতিক্রমের পর আপনি নিজে বাংলাদেশ ইমিগ্রেসান সংক্রান্ত কাজ গুলি সম্পন্ন করবেন। ইমিগ্রেসেনের জন্য কোন টাকা দিতে হয় না। আপনার লাগিজ বাসের কুলিরাই ইন্ডিয়ান বাসে নিয়ে যাবে,এরজন্য এক্সট্রা টাকা দিতে হবে না। সাবধান ইমিগ্রেসেনের ভিতর অনেক দালাল থাকে শুতরাং ওদের কথার ফাপরে পরবেন না।
চতুর্থ, একি পদ্ধতিতে ভারতীয় ইমিগ্রেসান সংক্রান্ত কাজ গুলি সম্পন্ন করবেন।ইমিগ্রেসান ক্রস করতে কোন টাকা লাগে না।(সাবধান এখানে বাংলাদেশে থেকেও দালালের আনাগোনা বেশী শুতরাং ওদের কথার খপ্পরে পরবেন না)।
পঞ্চম, বর্ডারের আসেপাশে অনেক মানি চেইঞ্জার আছে ভুলেও এখানে ডলার ভাঙ্গাবেন না কারন ওরা রেইট কম দেয় অনেক সময় নকল ও ছিঁড়া নোট দেয় আর ভারতে ছিঁড়া নোট চালানো যায় না।
ষষ্ঠ, ভারতের ইমিগ্রেসানের পর বাস কতিৃপক্ষ আপনাকে নতুন ভারতীয় বাসে উঠাবে। এটা আপনাকে কলকাতা মারকুইস স্ট্রীট নামক স্থানে নামাবে।
সপ্তম, বাস থেকে নামার পর কয়েকটি মানি চেইঞ্জারে দাম যাচাই করে ডলার ভাঙ্গাবেন (আমার মতে আপনার সব ডলার কলকাতায় ভাঙ্গানো ভাল, কারন দিল্লিতে ডলারের রেইট কলকাতার চাইতে অনেক কম দেয়)।
অষ্টম, কলকাতা থেকে সিম না কেনাই উত্তম কারন দিল্লিতে এই সিমকার্ডটি রোমিং হয়ে যাবে তখন প্রতি মিনিট ১৪ রুপি করে কাটবে।
নবম, মারকুইস স্ট্রীটে দেখবেন অনেক হোটেল আছে। আজকের রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিবেন। ভারা ৩৫০-৪০০ রুপি নিবে।
দশম, হোটেলে উঠার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে নিউ দিল্লির রেল টিকেটের জন্য সোজা শিয়ালদাহ রেল স্টেশন অথবা হাওড়া রেল স্টেশনে যাবেন এই দুইটি স্টেশন মারকুইস স্ট্রীট থেকে কাছে। (বাসে করে স্টেশনে যেতে পারবেন ভাড়া মাত্র ৭ রুপি নিবে অন্যথায় ট্যাক্সিতে গেলে ২০০ রুপি নিবে, বাস অলেয়েন্টাল নামক স্থানে গিয়ে পাবেন, কাউকে জিজ্ঞেস করলেই অলেয়েন্টাল কোথায় দেখিয়ে দিবে)
এগার, রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেস, নিউ দিল্লি এক্সপ্রেস এই তিনটি ট্রেন কলকাতা থেকে নিউ দিল্লি যায়। সো আপনি এই তিনটির যেকোনো একটির টিকেট কাটবেন। দুরন্ত এক্সপ্রেস সকাল ১২ টা, রাজধানী এক্সপ্রেস বিকাল ৪.৩০ এবং নিউ দিল্লি এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে ছাড়ে। মনে রাখবেন ভারতীয় ট্রেন সেবা অনেক উন্নত এবং সঠিক সময়ে ট্রেনের নির্গমন এবং আগমন হয় শুতরাং সঠিক সময়ে স্টেশনে চলে যাবেন। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় এসি যেই বাথ(আপনার সিট)খালি পাবেন ওইটার টিকেট কাটবেন। টিকেট কাটার সময় লোয়ার বাথটি কাটবেন যদি এভেইলএভল থাকে। টিকেট মূল্য ১৪০০ রুপি-২৩০০ রুপি। সাবধান দালাল, হোটেল বয় কারও মাধ্যমে টিকেট কাটবেন না ওরা অতিরিক্ত মূল্য আপনার কাছ থেকে নিবে।
বার, ট্রেনে খাবার নিয়ে উঠবেন না, ট্রেন কতিৃপক্ষ সব বেলার খাবার বিনামূল্যে দিবে। আর খাবারের মানও ভাল। কলকাতা থেকে নিউ দিল্লি যেতে ১৫ ঘণ্টা লাগবে। নিউ দিল্লি স্টেশনে (জায়গাটার নাম পাহারগঞ্জ) নামার পর রিটার্ন যাওয়ার টিকেট কেটে নিবেন অথবা হোটেল উঠে ফ্রেশ হয়ে তারপর কাটবেন। হোটেল ঠিক করার জন্য ইম্পিরিয়াল সিনেমা হলের(জায়গাটার নাম পাহারগঞ্জ) কাছে যাবেন, স্টেশন থেকে খুব কাছে ইচ্ছা করলে হেটেই যেতে পারবেন। ঐ জায়গায় অনেক হোটেল পাবেন ভাড়া নিবে প্রতি দিন ৪০০-৫৫০ রুপি। অনেকে ইউথ হস্টেলে (নিতি মার্গ) থাকার জন্য সাজেস্ট করে কিন্তু সেখানে আসেপাসে কোন খাবার হোটেল নেই পুরাই নির্জন এমনকি চা, সিগারেটের দোকান পর্যন্ত নেই, আর ইউথ হস্টেলে খাবার বেবস্থা আছে কিন্তু দাম অনেক চওড়া। সেই তুলনায় পাহারগঞ্জে কমদামি খাবার হোটেলের অভাব নাই। চাইলে International Youth Hostel এ গিয়েও থাকতে পারেন। খরচ সবচেয়ে কম, এম্বাসি ও খুব কাছে হবে। Youth Hostel এর পাশেই ফায়ার সার্ভিস আছে, ঐখানে সব চেয়ে কম খরচে খেতে পারবেন।
তের, ভোডাফোনের একটি সিম কিনবেন দাম পরবে ১০০ রুপি। দোকানদারকে বলবেন বাংলাদেশে কম রেইটে কল সেট করে দিতে। তখন প্রতি মিনিত ৪.৩০ রুপি কাটবে।
চোদ্দ, সবজি দিয়ে ভাত খেতে পারেন তাহলে খরচ অনেক কম পরবে প্রতি বেলা ৭০ রুপি। সকালে রুটি সবজি নিবে ২৫ রুপি, আর প্রতি কাপ চায়ের দাম নিবে ৫ রুপি।
পনের, সকালবেলা এম্বাসসির উদ্দেশে পাহারগঞ্জ থেকে চানাকিপুরি ট্যাক্সি অটো(সিএনজি) দিয়ে যাবেন। ভাড়া নিবে ১০০ রুপি। সকল এম্বাসসি চানাকিপুরি তে অবস্থিত।
ষোল, ইন্টারভিউ শেষে একটু দিল্লির বিখ্যাত স্থান গুলিতে যেতে পারেন।
সতের, একই পদ্দতি একই রুট একই স্থান একই খরচ ব্যাবহার করে দেশের ছেলে দেশে ফিরে আসবেন।
মন্তব্যঃ কোথায় কত খরচ হতে পারে তার একটি হিসাব আমি দিয়েছি, আপনার ট্যুর যদি ০১ সপ্তাহের হয় ৩০- ৩৫ হাজার টাকা আপনি সঙ্গে নিয়ে যাবেন।

কারটেসি- শাওন নোমান

No comments

Powered by Blogger.